মীকাত সম্বন্ধে কিছু জরুরী কথা

মীকাত সম্বন্ধে কিছু জরুরী কথা - মীকাতের সীমানার একটি চিত্র

মীকাত সম্বন্ধে কিছু জরুরী কথা

১। হজ্ব বা উমরাহ্ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে ইহরাম বাঁধতে হয়, সে স্থানকে মীকাত বলে। মীকাত অর্থ কোনো কাজ করার নির্দিষ্ট স্থান বা সীমানা। হজ্ব বা উমরাহ্ করার জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। আল্লহ্তা‘আলা ইব্রাহীম (আঃ) এর মাধ্যমে হজ্ব ও উমরাহ্ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফে পৌঁছার পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হাজীদের জন্য বিভিন্ন দিকে কতিপয় স্থানকে ‘মীকাত’ হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। 

যুলহুলাইফা

যেমনঃ- যুলহুলাইফাঃ এ স্থানটি মক্কা শরীফ থেকে উত্তর দিকে অর্থাৎ মদীনার দিকে আনুমানিক ৪১০ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত, আর মদীনা শহর থেকে ১৩ কিঃমিঃ দূরে মক্কার পথে অবস্থিত। মদীনাবাসী বা যাঁরা এ পথ দিয়ে (মদীনা হয়ে) হজ্ব / উমরাহ্ করতে আসেন, তাঁদের জন্য এটাই মীকাত। মক্কা শরীফ থেকে এটাই সবচেয়ে দূরতম মীকাত। (মীকাতের নকশায় দেখুন)।

এখানে উল্লেখ্য, রসূল (সঃ) এ স্থান থেকেই তাঁর জীবনের একমাত্র হজ্ব, বিদায় হজ্বের ইহরামের বেঁধেছিলেন। সে সময়ে এ স্থানে একটি বিরাট গাছ ছিল। পরবর্তীতে বর্তমান মাসজিদটি নির্মিত হয়েছে। রসূল (সঃ) সফরের সময়ে এ গাছের নিচে বিশ্রাম নিতেন। তাই এই মসজিদের নাম ‘মাসজিদে শাজারাহ্’ (গাছতলার মাসজিদ)। মদীনাবাসীদের মীকাত হওয়ায় একে ‘মাসজিদে মীকাত’, ‘মাসজিদে ইহরাম’ এবং ‘মাসজিদে বীরে আলীও’ বলে। 

হাদীসে উল্লেখ আছে, ‘রসূল (সঃ) যখন মক্কা অভিমুখে যাত্রা করতেন, তখন তিনি গাছতলার মাসজিদে সালাত আদায় করতেন। ফেরার পথে তিনি যুলহুলাইফা উপত্যকার মধ্যস্থলে সালাত আদায় করতেন। সেখানেই রাত্রি যাপন করতেন। বুখারী: ১৪৩৩, মুসলিম: ১২৫৭

ইয়া লাম লাম

খ। ইয়ালাম লামঃ এ স্থানটি মক্কা শরীফের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। মক্কা শরীফ থেকে প্রায় ৯৫ কিঃমিঃ দূরে আরব সাগর তীরের অদূরে অবস্থিত একটি পাহাড়। ইয়ামেনবাসী বা এ পথে যাঁরা হজ্ব করতে আসেন, এটাই তাঁদের মীকাত। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়ার লোকজন এ পথে মক্কায় আসেন। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের হাজীগণই (যাঁরা আকাশ পথে হজ্বে আসেন) জেদ্দা বিমানবন্দর হয়ে মক্কায় আসেন। 

সুতরাং ইয়ালামলামই তাঁদের মীকাত। জেদ্দা বিমানবন্দর পৌঁছে ইহরাম বাঁধলে তা নাজায়েয হবে। কেননা ইয়ালামলাম স্থানটি জেদ্দা বিমানবন্দর পৌঁছার পূর্বেই অতিক্রম করতে হয়। ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করলে একটি দম দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

জুহফা

গ। জুহফাঃ মক্কা শরীফ থেকে এ স্থানের দূরত্ব প্রায় ২০৪ কিঃমিঃ। সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ফিলিস্তিন, মিসর ও সেদিক থেকে আগত হাজীদের জন্য এটা মীকাত।

কারনুল মানাযিল

ঘ। কারনুল মানাযিলঃ এ স্থানটি মক্কা শরীফের পূর্ব দিকে প্রায় ৭৮ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। এ স্থানটি এখন ‘সাইলুল কাবীর’ নামে প্রসিদ্ধ। রিয়াদ, দাম্মাম ও তায়েফ, কাতার, কুয়েত, আরব আমীরাত, বাহরাইন, ওমান, ইরাক, ইরানসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ এবং এ পথ দিয়ে যাঁরা হজ্ব/উমরায় আসেন, তাদের জন্য এ স্থানটি মীকাত।

যাতুল ইরাক

ঙ। যাতুল ইরাকঃ এ স্থানটি মক্কা শরীফের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় ৯৪ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। ইরাকবাসী বা এ পথে আগত হাজীদের জন্য এটা মীকাত।

বহিরাগত হাজীদের মক্কায় অবস্থানকালে উমরাহ্ ও হজ্বের মীকাত - ২

ক। সমগ্র মক্কা এলাকাকে হজ্ব ও উমরাহর মীকাত সংক্রান্ত ব্যাপারে দু’টি বেষ্টনীতে আবদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম হলো- ‘হারাম’ এলাকা, যার সীমানা কা’বা শরীফ থেকে পূর্বে প্রায় ১৩ কিঃমিঃ, উত্তরে ৭ কিঃমিঃ, পশ্চিমে ২২ কিঃমিঃ এবং দক্ষিণে ২২ কিঃমিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত। 

দ্বিতীয়টি হলো ‘হিল্ল’ এলাকা। এটি হল হারাম সীমানার বাইরে, কিন্তু নির্ধারিত ৫টি মীকাতের সীমানার ভেতরের এলাকা (যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে এবং যা মীকাতের এবং হুদুদের সীমানার চিত্রে দেখানো হয়েছে)।

খ। হারাম সীমানার ভেতরে যাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তাঁদের উমরাহর মীকাত হলো ‘হিল্ল’ এলাকা অর্থাৎ তাদেরকে নিজ বাসস্থান ছেড়ে হারাম সীমানার বাইরে ‘হিল্ল’ এলাকায় গিয়ে ইহরাম বেঁধে উমরাহ্ করতে আসতে হবে। কিন্তু তাঁদেরকে হজ্বের জন্য নিজ নিজ বাসস্থান থেকে হজ্বের ইহরাম বেঁধে মীনায় যেতে হবে। বহিরাগত হাজীদের জন্যও এ বিধানই প্রযোজ্য। অর্থাৎ বহিরাগত হাজ্বীগণ যদি মক্কায় অবস্থান কালে অতিরিক্ত নফল উমরাহ্ করতে চান, তাহলে তাঁদেরকে নিজ হোটেল বা বাড়ী থেকে বের হয়ে হারাম এলাকা ছেড়ে ‘হিল্ল’ এলাকাতে গিয়ে ইহরাম  বেঁধে উমরাহ্ করতে আসতে হবে। 

এক্ষেত্রে তান্ঈম, হুদায়বিয়া ও জিরানা নামক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধা যেতে পারে। কিন্তু বহিরাগত হাজীদেরকে মক্কাবাসীদের মতো নিজ নিজ হোটেলের / রুম থেকে বা বাড়ী থেকে হজ্বের ইহরাম বেঁধে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে।

গ। সমগ্র ‘হিল্ল’ এলাকার মধ্যে তানঈম নামক স্থানটি হারাম সীমানার বাইরে, কিন্তু কা’বা শরীফের সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থান। হজ্বের সফরে বিবি আয়েশা (রাঃ) এর ওজর অবস্থা হওয়ার কারণে সকলের সাথে হজ্বের পূর্বে উমরাহ্ করতে পারেন নি। সুতরাং তিনি হজ্ব সম্পন্ন করে পবিত্র হওয়ার পর হুজুর (সঃ) এর নির্দেশে তাঁর (আয়েশার) ভাই আব্দুর রহমানকে সাথে নিয়ে তান্ঈম নামক স্থানে গিয়ে উমরাহর ইহরাম বেঁধে উমরাহ্ করতে এসেছিলেন। 

এ ঘটনার সূত্র ধরে যুগ যুগ ধরে লক্ষ লক্ষ হাজী সাহেবগণ তানঈম নামক স্থানে নির্মিত মাসজিদুল আয়েশা থেকে ইহরাম বেঁধে উমরাহ্ করতে আসেন। তানঈম স্থানটিকে মীকাত হিসেবে গণ্য করার ব্যাপারে ইখতিলাফ (মত-পার্থক্য) বিদ্যমান।

বিঃ দ্রঃ

(১) মক্কা শরীফে যেতে যদি দু’টি মীকাত পড়ে, তাহলে প্রথম মীকাত হতেই ইহরাম বাঁধতে হবে।

(২) মীকাত সীমানার অভ্যন্তরে কোনো লোক যদি দীর্ঘ দিন চাকুরী করেন বা অন্য কোনো কারণে মক্কায় অবস্থান করেন, তাহলে মক্কাবাসীর মীকাতই তাঁর মীকাত হিসেবে বিবেচিত হবে।

(৩) অনুরূপভাবে কোনো বহিরাগত হাজী নিজ মীকাত থেকে উমরাহর ইহরাম বেঁধে উমরাহ্ পালন করে হালাল হওয়ার পরে মক্কাবাসীর মতোই হারাম এলাকা থেকে অর্থাৎ নিজ হোটেল/বাড়ী থেকে হজ্বের ইহরাম বাঁধবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url