পুরুষ এবং মহিলাদের ইহরাম ও মাস‘আলা
পুরুষদের ইহরাম ও মাস‘আলা
ক। ব্যক্তির শরীরের আকার-আকৃতি অনুযায়ী দু’টুকরা সাদা রং-এর সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা। এক টুকরা লুঙ্গীর মতো করে এবং অন্যটি গায়ের চাদরের মতো করে পরা। এ কাপড় পরার বিস্তারিত নিয়ম-পদ্ধতি অভিজ্ঞ হাজী সাহেবদের নিকট থেকে শিখে কয়েকবার অনুশীলন করে নেবেন।
খ। ইহরামের গায়ের চাদরটি শুধু তওয়াফের সময় ছাড়া অন্য সময়ে শরীর ঢেকে অর্থাৎ দু’কাঁধই ঢেকে পরতে হবে। শুধু তওয়াফের সময় ইজতিবা করতে হবে অর্থাৎ ডান কাঁধ খোলা থাকবে।
ইজতিবা করার নিয়ম:- চাদরের এক কিনারা ডান হাতের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রাখতে হবে। এমনটি করলে ডান কাঁধ উন্মুক্ত থাকবে। এ অবস্থাকে ইজতিবা বলে।
গ। পায়ে স্পঞ্জের অথবা রাবারের দু’ফিতাওয়ালা স্যান্ডেলই উত্তম। মোজা পরা নিষেধ। পাম সু জুতাও চলবে না। পায়ের পিঠের পুরা অংশ খোলা থাকতে হবে।
ঘ। ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখমন্ডল খোলা থাকবে। কোনো অবস্থাতেই অর্থাৎ অতি শীত/অতি গরমেও রুমাল, গামছা, টুপি, চাদর, শাল ইত্যাদি দ্বারা মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকা যাবে না।
ঙ। প্লেনের ভিতরে অথবা বাসে চলার সময় অথবা মুজদালিফায় অত্যধিক শীত লাগলে সেলাই বিহীন কম্বল, চাদর ইত্যাদি ইহরামের কাপড়ের উপর ব্যবহার করা যাবে। তবে সাবধান, কোনো অবস্থাতেই মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকা যাবে না।
চ। ইহরাম অবস্থায় হাত ঘড়ি ব্যবহার করা যাবে।
ছ। ইহরাম অবস্থায় কোমরে সেলাই যুক্ত কাপড়ের অথবা চামড়ার বেল্ট ব্যবহার করা যাবে। টাকা-পয়সা, পাসপোর্ট, জরুরী ঔষধ, টিস্যু পেপার, রুমাল, হজ্বের ছোট বই ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য চামড়ার/কাপড়ের ব্যাগও সাথে রাখা যাবে।
জ। ইহরাম অবস্থায় পায়খানা, পেশাব, গোসল করা যাবে। গোসলের সময় সেলাইবিহীন লুঙ্গি-গামছা পরে গোসল করা যাবে। গোসল শেষ করার সাথে সাথে ইহরামের কাপড় পুনরায় পরিধান করতে হবে।
ঝ। পেশাব-পায়খানা করার পর গন্ধহীন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া যাবে। কিন্তু গোসল করার সময় সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষেধ।
ঞ। গামছা / তোয়ালে দিয়ে শরীর ও মাথা হালকাভাবে মুছতে হবে, যাতে শরীরের পশম অথবা মাথার চুল উঠে না যায়। যদি চুল উঠে যায়, তাহলে কাফ্ফারা দিতে হবে। মাথায় খুশকি থাকার কারণে চুল উঠলে কোনো জরিমানা দিতে হবে না।
ট। ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি লাগানো নিষেধ।
ঠ। পান-সুপারি খাওয়া যাবে, তবে সুগন্ধি জর্দা খাওয়া নিষেধ। পান-সুপারি ইত্যাদি না খাওয়াই উত্তম।
ড। ইহরাম অবস্থায় যে কোনো হালাল খাবার খাওয়া যাবে। তবে অত্যধিক সুগন্ধিযুক্ত খাবার না খাওয়াই উচিত।
ঢ। ইহরাম অবস্থায় হারামের সীমানায় পশুপাখি, জীব-জানোয়ার শিকার করা বা শিকার করতে সাহায্য করা নিষেধ। তবে বিষাক্ত কোনো সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি মারা যাবে।
ণ। ইহরাম অবস্থায় শরীরের ময়লা, মাথার খুশকি ইত্যাদি বের করা যাবে না। চিরুনি দিয়ে চুল-দাঁড়ি আঁচড়াতে গিয়ে চুল বা দাঁড়ি উঠানো যাবে না। চিরুনি ব্যবহার না করাই উত্তম।
ত। ইহরাম অবস্থায় পেস্ট ছাড়া টুথব্রাশ ব্যবহার করা যাবে। তবে মেসওয়াক ব্যবহার করা উত্তম।
থ। উমরাহর সায়ী শেষ করে ইহরাম অবস্থায় আপনি নিজের স্ত্রীর বা অন্য যে কোনো পুরুষের চুল কেটে দিতে পারবেন। অন্য একজনের দ্বারা বা সেলুনে গিয়ে চুল কেটেও ইহরাম মুক্ত হতে পারবেন। অন্যের চুল কেটে দেওয়ার পূর্বে নিজে হালাল হতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। হালাল হওয়ার জন্য নিজের চুল নিজেও কাটতে পারবে। তবে পুরুষদের নিজের চুল নিজে কাটা কঠিন।
দ। ইহরাম অবস্থায় নিজের স্ত্রীর সাথেও কোনো প্রকার যৌনআলাপ, যৌন কার্যকলাপ, এমনকি চুম্বন করাও নিষেধ। আল্লহ কুরআনের সূরাঃ বাকারার ১৯৭ নং আয়াতে ইহরাম অবস্থায় যৌন সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। অতএব সাবধান! সাবধান!!
ধ। ইহরাম অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ করা, কটুক্তি করা, গীবত করা, মারামারি করা, অশ্লীল কথা-বার্তা বলা, বেহুদা কথা বলা, দুর্ব্যবহার করা ইত্যাদি গর্হিত কাজ করা হারাম। এসব গর্হিত কাজ অবশ্য সব-সময়ের জন্যই হারাম।
মহিলাদের ইহরাম ও মাসআ’লা
পুরুষ ও মহিলাদের ইহরামের সকল নিয়ম-কানুন একই ধরনের শুধু নিম্নলিখিত ব্যতিক্রম ছাড়া :-
ক। মহিলারা সেলাইযুক্ত যেকোনো ধরণের মার্জিত কাপড় যেমন- সেলোয়ার কামিজ, ওড়না, পায়জামা, পেটিকোট, শাড়ি-ব্লাউজ, বোরখা ইত্যাদি পরতে পারবেন। সঠিক পর্দা করার উত্তম উপায় হলো সেলোয়ার কামিজের উপর ঢিলা-ঢালা বোরখা, জিলবাব, আবায়া ইত্যাদি পরিধান করা।
খ। পায়ে জুতা, মোজা/স্যান্ডেল, নিত্য ব্যবহৃত অলংকার ইত্যাদি ব্যবহার করা জায়েয। হাতে মোজা পরা নাজায়েয।
গ। কসমেটিক্স জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ প্রয়োজনে ঔষধ হিসাবে গন্ধবিহীন ক্রীম/ভেসলিন ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।
ঘ। মেসওয়াক/টুথব্রাশ ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু পেস্ট ব্যবহার করা নিষেধ।
ঙ। মহিলাদের মুখ-মন্ডল, হাতের কব্জির নিচের অংশ এবং পায়ের পাতা ব্যতীত মাথার চুলসহ আপাদমস্তক ঢাকা থাকবে। তবে বেগানা পুরুষের মুখোমুখি হলে মুখমন্ডল এমনভাবে আলাদা কাপড় দিয়ে ঢাকতে হবে, যেন সেই আলাদা কাপড়টি মুখমন্ডলের সাথে টাইট হয়ে লেগে না থাকে। সঠিকভাবে এ কাজটি করতে হলে কপালে একটি ব্যান্ড বাঁধতে হবে এবং বোরখার পাতলা
কাপড়ের নেকাবটি ব্যান্ডের উপর দিয়ে হালকাভাবে মুখমন্ডলের উপরে ঝুলিয়ে দিতে হবে। তা হলে নেকাবটি মুখ মন্ডলের উপর ঝুলে থাকবে ফলে মুখ-মন্ডল ঢেকে যাবে। এ ব্যবস্থা শুধু ইহরাম অবস্থায় নয়- এ ব্যবস্থা বরং সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য।
চ। হায়েয ও নিফাসের সময় ইহরাম বাঁধা জায়েয। এ সময় মসজিদে প্রবেশ করা, তওয়াফ করা, নামাজ পড়া ও কুরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ। তবে তালবিয়াহ, তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) পড়া জায়েয। যে কোনো দুআ’ দরূদ পড়া ও মুনাজাত করা জায়েয। এ অবস্থায় মীনা, আরাফা এবং মুযদালিফায় অবস্থান করা জায়েয।
ছ। সায়ী শেষ করে মহিলারা নিজের চুল নিজেই কাটতে পারবেন এবং অন্য মহিলার চুলও কেটে দিতে পারবেন। মাহরাম পুরুষরা নিজ নিজ মহিলাদের চুল কেটে দিতে পারবেন।