সায়ী শেষে মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটার পালা
সায়ী শেষে মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটার পালা
১। মাথা মুন্ডন করা বা মাথার সম্পূর্ণ চুল ছাঁটা উমরাহর শেষ ওয়াজিব আ’মল।
২। মাথা মুন্ডানোকে আরবীতে ‘হালক’ বলে এবং মাথার সম্পূর্ণ চুল ছোট করে ছাঁটাকে ‘কসর’ বলে। সায়ী শেষ করে উমরাহ্কারীগণ এবং তামাত্তু হজ্বকারীগণ মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল ছেঁটে ইহরাম মুক্ত হন।ক্বিরান হজ্বকারীগণ উমরার সায়ী শেষ করে এবং ইফরাদ হজ্বকারীগণ ‘তওয়াফে কুদুম’ শেষ করে মাথা না মুন্ডিয়ে ইহরাম অবস্থাতেই অবস্থান করেন এবং হজ্বের সায়ী শেষ করে মাথা মুন্ডিয়ে ইহরাম মুক্ত হন। অর্থাৎ ইফরাদ ও কিরান হাজীদের দীর্ঘ সময় ধরে ইহরামে থাকতে হয়।
৩। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) যখন মক্কায় আসলেন তখন সাহাবীদেরকে আদেশ দিলেন তারা যেন তওয়াফ ও সায়ী করে মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল ছেঁটে হালাল হয়ে যায় (বুখারী ৬/২১৫)। অত্র হাদীস হতে বুঝা যায়, উমরাহ্ করার পর মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটা উভয়টিই জায়েয আছে।
৪। মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটা সম্বন্ধে মহান আল্লহ সূরাঃ ফাত্হ-এর ২৭ নং আয়াতে বলেছেন, ‘আল্লহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে, কেউ থাকবে মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় আর কেউ থাকবে চুল ছাঁটা অবস্থায়। তখন তোমাদের কোনো রকম ভয়-ভীতি থাকবে না। (স্বপ্নের) একথা তিনিই জানতেন, যার কিছুই তোমাদের জানা ছিল না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।’ আলোচ্য আয়াতে মস্তক মুন্ডনকারীদের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে যা মুন্ডনকারীদের শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশ করে। সুতরাং মাথা মুন্ডন করতে কোনো দ্বিধা করবেন না।
৫। এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এবং আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন যে, রসূলে কারীম (সঃ) তাঁর হজ্বের সফরে সায়ী শেষ করে মাথা মুন্ডিয়ে এভাবে দুআ’ করেছিলেন, ‘হে আল্লহ! আপনি মাথা মুন্ডনকারীদের মাফ করে দিন।’ তাদের জন্য তিনি এ দুআ’ তিন বার করেছেন। তখন সাহাবায়ে কেরামের অনুরোধে তিনি কছরকারীদের (যারা চুল ছেঁটেছিলেন) জন্য একবার দুআ’ করেছিলেন (বুখারীঃ ৬/২১০, মুসলিম ৬/৪৩৭)। সুতরাং কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং হাদীসসমূহের দ্বারা স্পষ্টই বুঝা গেল যে মাথা মুন্ডন করাই উত্তম। যাঁরা শুধু উমরাহ্ করতে যান তাঁদের জন্যও উমরাহর সায়ী শেষ করে মাথা মুন্ডন করাই উত্তম।
৬। পুরুষদের জন্য মাথা মুন্ডানো বা সম্পূর্ণ চুল ছাঁটার জন্য মক্কা শরীফের অলি-গলিতে সেলুন আছে। পুরুষরা নিজেরা একে অন্যের চুল কেটেদেয়া জায়েয। অন্যের চুল কাটার আগে সেলুনে গিয়ে নিজের চুল প্রথমে কেটে হালাল হতে হবে, এমন কথার কোনো ভিত্তি নেই। ইচ্ছা করলে নিজেই নিজের চুল কেটে/ছেঁটে হালাল হতে পারেন (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ৩/১১৫)। যদিও নিজের চুল নিজে কাটা কষ্টকর ব্যাপার। তবে ব্লেড বা রেজার দিয়ে একে অন্যের মাথা মুন্ডন করে দেয়া কঠিন কাজ নয়।
৭। মাথা মুন্ডানো বা চুল কাটা/ছাঁটার পর আপনার একটি উমরাহ্ সম্পাদন করা হলো। এখন নিজ নিজ রুমে এসে ইহরাম মুক্ত হয়ে (অর্থাৎ পুরুষেরা সেলাই বিহীন পোশাক খুলে) স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে সকল ইবাদাত বন্দেগী করতে থাকুন। নফল তওয়াফ স্বাভাবিক পোশাকেই করবেন। নফল তওয়াফের পরে কোনো সায়ী নেই।