হজ্বের পূর্বে বা পরে পবিত্র মক্কায় অবস্থানকালে নামাজ পড়ার বিধান
হজ্বের পূর্বে বা পরে পবিত্র মক্কায় অবস্থানকালে নামাজ পড়ার বিধান
১। বিভিন্ন মাযহাব, নানা ধরণের প্রশিক্ষণ/তালীম এবং অজ্ঞতার কারণে মক্কাশরীফে অবস্থানকালে এবং হজ্বের ৫ দিন মীনা আরাফাহ এবং মুযদালিফায় অবস্থানকালে হাজীগণ ৪ রাকাতের ফরজ নামাজ আদায়ের ব্যাপারে এবং যোহর ও আছরের নামাজ একত্রে আদায়ের ব্যাপারে অনেক ধরনের বিড়ম্বনায়/বিভ্রান্তিতে/সন্দেহে পড়ে যান। এ কারণে হাজী সাহেবরা এক রুমে ও এক তাঁবুতে অবস্থান করেও ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে নামাজ আদায় করেন।
অনেক সময় নিজেদের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ, তীব্র তর্ক-বিতর্ক, এমনকি অবাঞ্ছিত ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়েন, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নহে। পবিত্র হজ্বের সফরে এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গুরুতর অপরাধ ও কবীরা গুনাহের কাজ। সুতরাং এ বিষয়ে সকলেরই স্বচ্ছ জ্ঞান/ধারণা থাকা অপরিহার্য। তাই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন।
২। হানাফী মাযহাবের বিধানমতে কোনো ব্যক্তি ৪৮ মাইলের বা ৭৭ কি.মি. এর অধিক দূরত্বের স্থানে সফর করলে এবং ১৪ দিন বা তার চেয়ে কম সময় সে স্থানে অবস্থান করলে তাকে মুসাফির বলে গণ্য করা হয়। আর মুসাফির হিসেবে তাঁকে কসর নামাজ পড়তে হবে। অন্য দিকে একই দূরত্বের স্থানে একাধারে ১৫ দিন বা তার অধিক সময় সেখানে অবস্থান করলে তাঁকে মুকীম (স্থায়ী) বলে গণ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে তাঁকে পূর্ণ নামাজ পড়তে হয়।
৩। মুসাফিরদের জন্য আল্লহ্ তায়ালা পরম দয়া করে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা নিসার ১০১ নং আয়াতের মাধ্যমে কসর নামাজের বিধান দিয়েছেন। অর্থাৎ ৪ রাকা‘আত ফরজ নামাজ সংক্ষেপ করে দুই রাকাআ’ত করে আদায় করা ফরজ করে দিয়েছেন। আয়াতটি হলোঃ
অর্থ : তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে, তখন যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিরগণ তোমাদের জন্য ফিতনার সৃষ্টি করবে, তবে সালাত সংক্ষিপ্ত করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই।
৪। এ বিধান নাযিল হওয়ার পর রসূল (সঃ) কসর নামাজ আদায়ের বিস্তারিত নিয়ম কানুন উম্মতদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। (সহীহ্ বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসসমূহ দ্রষ্টব্য)
৫। যে ব্যক্তি যে মাযহাবই অনুসরণ করেন না কেন, নিজ নিজ মাযহাবের সঠিক নিয়ম পদ্ধতি জেনে নামাজ আদায় করবেন। তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না। অন্যের সাথে তর্ক-বিতর্কের কোনো প্রয়োজন নেই।
৬। কসর নামাজের বিধান এবং শর্তসমূহ সহীহ্ শুদ্ধভাবে অবগত হয়ে হজ্বের সফরে অথবা অন্য যে কোনো সফরে সঠিক পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করা সকলের জন্যই অপরিহার্য। এ ব্যাপারে অজ্ঞতার বা না জানার কোনো অবকাশ নেই। কবুল হওয়ার মত নামাজ আদায় করা সকলেরই নিজ নিজ দায়িত্ব। সুতরাং সকলকেই এ ব্যাপারে যত্নবান ও সতর্ক হওয়া অতীব জরুরী।
৭। হজ্বের সম্পূর্ণ সফরে দিন-তারিখ হিসেব করে সঠিক নিয়মে নামাজ আদায় করা সকলেরই নিজ নিজ দায়িত্ব। মীনা/আরাফার তাঁবুতে এ বিষয়ে অনাকাঙ্খিত বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মাযহাব ও ইমামদের মত পার্থক্যের এবং হাজীদের অজ্ঞতার কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি স্পর্শকাতর তাই বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে আ’মল করবেন।
৮। হজ্বের প্রধান রুক্ণ (ফরজ)ঃ - ৯ যিলহজ্ব তারিখে আরাফার ময়দানের সুনির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে যেকোনো স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও উপস্থিত থাকা/অবস্থান করা/উকূফ করা ফরজ।
৯। যাঁরা আরাফার ময়দানে এক প্রান্তে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় এবং তৎসংলগ্ন এলাকার তাঁবুতে অথবা উন্মুক্ত স্থানে অবস্থান করে হজ্বের সম্মানিত ইমামের ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন, তাঁরা সকলেই যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে অর্থাৎ এক আযানে এবং দুই একামতে জামাআ’তের সাথে আদায় করেন।
১০। যাঁরা সে জামাআ’তে শরীক হতে পারেন না, তাঁরা নিজ নিজ তাঁবুতে কী ভাবে বা কোন্ নিয়মে যোহরের ও আসরের নামাজ আদায় করবেন? এ ব্যাপারেও ইখ্তিলাফ (ভিন্ন ভিন্ন মত) বিদ্যমান। কেউ কেউ নিজ নিজ তাঁবুতেও যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করেন, আবার কেউ কেউ যোহরের ওয়াক্তে যোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নামাজ আদায় করে থাকেন। কেউ কেউ কসর করে পড়েন, আবার কেউ কেউ পূর্ণ নামাজ আদায় করেন।
১১। এসব ব্যাপারে হজ্বে যাওয়ার পূর্বেই বিজ্ঞ মুফতী/আলেমদের নিকট থেকে সঠিক মাসআলা জেনে যাবেন। সেখানে পৌঁছে নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও বাক-বিতন্ডা না করে নিজ কাফেলায় বা নিজ তাঁবুতে উপস্থিত বিজ্ঞ মুফতী/আলেমের নির্দেশানুসারে নামাজ আদায় করবেন। আমি নিজেও সীমিত জ্ঞানের মানুষ। সুতরাং এরচেয়ে বেশী ব্যাখ্যা দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। দয়াময় আল্লহ্ আমাদের আ’মল কবুল করুন।
১২। মসজিদে নামিরায় অনুষ্ঠিত জামা‘আতে যোগ দেওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ হাজীরা নিজ নিজ তাঁবু/স্থান ত্যাগ করে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। এটা করা অদৌ জরুরী নয় এবং এটা করার মধ্যে কোনো বিশেষ ফজীলতও নেই। এতে অনেক হাজী বরং ক্ষতিগ্রস্ত/বিপদের সম্মুখীন হন। যেমন পথ হারিয়ে যাওয়া, নিজের তাঁবু হারিয়ে ফেলা, নিজের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি কারণে অনেকে চরম পেরেশানিতে পড়েন।
সুতরাং নিজ নিজ তাঁবুতে/স্থানে অবস্থান করে মন প্রাণ ভরে ইবাদাত বন্দেগীতে মশগুল থাকাই শ্রেয়। মনে রাখবেন, আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকাই/ অবস্থান করাই হজ্বের প্রধান ফরজ আ’মল। সেখানে এক জামাআ’তেই নামাজ পড়তে হবে-এমন বাধ্য-বাধকতা নেই। আরাফাতের ময়দানের অবস্থানের প্রেক্ষাপটে সকলের জন্য এক জামা’আতে নামাজ আদায় করা সম্ভবও নয়। তাই আল্লহ্ এ বিধান জরুরী করেননি।
১৩। মুযদালিফায় পৌঁছে ইশার ওয়াক্ত হওয়ার পর এক আযানে দুই একামতে প্রথমে মাগরিবের ফরয নামাজ, তারপর ইশার ফরয ও বেতের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। নিজ কাফেলার সকলে মিলে জামাআ’তে নামাজ পড়া উত্তম। মুসাফিরদের সুন্নাত/নফল নামাজ পড়া ঐচ্ছিক। মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই।
বিঃ দ্রঃ এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পূর্ণ নামাজ (মুকিমের নামাজ) ও কসর নামাজ (মুসাফিরের নামাজ) আদায়ের ব্যাপারে এবং যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে আদায় করার ব্যাপারে ইখ্তিলাফ/মতভেদ বিদ্যমান। সুতরাং আপনি যে কাফেলায় যান, সে কাফেলার বিজ্ঞ মুফতী/আলেমের উপদেশ অনুযায়ী সকলের সাথে মিলে আ’মল করবেন। এ ব্যাপারে যতটুকু আলোচনা করলাম এরচেয়ে বেশী এ বইতে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আমি যতটুকু পড়েছি, শিখেছি ও জেনেছি তাতে হজ্বের ৫ দিন সকলকেই কসর করে নামাজ পড়তে হবে। দয়াময় আল্লহ্ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং সকলের ইবাদাত কবুল করুন।
মক্কা-মদীনায় নামাজের জন্য অন্যান্য বিধান
১। বাইতুল্লাহ শরীফের চারদিকের চত্বরে (মাতাফে), মাসজিদুল হারামের ভেতরে এবং বাইরের চত্বরে, মাসজিদুল হারামের চারদিকে যেসব হোটেলে জামা‘আতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে এবং সকল রাস্তার উপর এক জামা‘আতে নামাজ পড়া জায়েয, যেহেতু এ সকল স্থান হারামের সীমানার ভেতরে অবস্থিত। অন্য কোনো দেশে বা অন্য কোনো স্থানে এভাবে এক জামা‘আতে নামাজ আদায় হবে না।
২। তওয়াফ করার সময় নামাজীগণের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয। তবে সিজদা করার স্থান দিয়ে নয়- একটু দূর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। তাই বলে সিজদারত নামাজীর উপর দিয়ে ডিঙ্গিয়ে যাওয়া কোনো ভাবেই বৈধ নয়।
৩। মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুন নববীর সম্মানিত ইমামগণ মুকীম, তাই আপনি মুসাফির হওয়া সত্তেও তাঁদের পেছনে আপনাকে পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে। এটাই শরীয়তের বিধান।
৪। হজ্ব ব্যতীত অন্য সময়ে মাকামে ইব্রাহীমের অতি সন্নিকটে নামাজ পড়া যায়, কিন্তু হজ্বের সময়ে মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে (অতি নিকটে) নামাজ পড়া সঠিক নয়/সম্ভবও নয়- এতে করে ভিড়ের জন্য একদিকে নামাজে একাগ্রতা নষ্ট হয়, অন্যদিকে তওয়াফকারীদের গতি বিঘ্নিত হয়।
সুতরাং এ নামাজ মাকামে ইব্রাহীম থেকে বেশ দূরে অথবা মাসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে আদায় করে নেবেন। মনে রাখবেন, মাকামে ইব্রাহীম বলতে ঐ স্তম্ভটুকুর স্থানকেই বুঝায় না বরং নামাজের জন্য সমগ্র মাসজিদুল হারামকেই বুঝায়।
৫। মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে একত্রে কাতার বন্দী হয়ে নামাজ পড়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ (হারাম)। কাজেই মাসজিদুল হারামে পুরুষদের সাথে নামাজে না দাঁড়িয়ে নিজ রুমে নামাজ পড়াই উত্তম। কোনো মহিলা যদি পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে একসাথে নামাজ পড়েন, তাহলে তিন জন পুরুষের (অর্থাৎ উক্ত মহিলার ডানে ও বামে এবং পেছনের) নামাজ ফাসেদ (বাতিল) হয়ে যাবে। অতএব পুরুষ-মহিলা সকলকেই বিষয়টি বুঝতে হবে এবং সেভাবেই নামাজ আদায় করতে হবে।
৬। অনেক মহিলা/পুরুষ নামাজের জামাআ’তের সময়ের দিকে খেয়াল না রেখে তওয়াফ শুরু করে দেন। ফলে যখন জামাআ’তের জন্য একামত শুরু হয়, তখন তাঁরা নামাজে দাঁড়ানোর জন্য কোনো স্থান না পেয়ে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। তখন তাঁরা চরম পেরেশানিতে পড়েন, অন্য নামাজীদেরকে বিব্রত করেন এবং নিজেরাও লাঞ্ছিত হন। সুতরাং হজ্বের সকল আমলই সাবধানতার সাথে সময়ের হিসাব-নিকাশ করেই করা উচিত। আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো আমল করা উচিত নয়।
৭। যে সকল মহিলাগণ মাসজিদুল হারামের ভেতরে জামাআ’তের সাথে নামাজ আদায় করতে ইচ্ছুক, তাঁরা জামাআ’তের নির্ধারিত সময়ের অনেক পূর্বেই মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে (মাসজিদুল হারামের ভেতরে অথবা বাইরে) পৌঁছে জামাআ’তের জন্য অপেক্ষা করবেন।
৮। মাসজিদুল হারামে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পুরুষদের সাথে মহিলাদের ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি করা নাজায়েয, বরং গুরুতর গুনাহের কাজ। অতএব সকলকেই, বিশেষ করে মহিলাদেরকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। জামাআ’তের অনেক পূর্বে প্রবেশ করতে হবে এবং জামাআ’ত শেষ হওয়ার অনেক পরে ভিড় কমলে বাইরে আসতে হবে। এতো সব বিড়ম্বনার কারণে মহিলাদেরকে নিজের রুমে নামাজ পড়াই উত্তম/শ্রেয় এবং এটাই শরীয়তের হুকুম।
৯। মাসজিদুল হারামে প্রবেশের ও বহির্গমনের জন্য পুরুষ-মহিলাদের আলাদা আলাদা গেট আছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, অনেক পুরুষ-মহিলা হাজীরা কিছুই মানেন না, যে যেখান দিয়ে পারেন, প্রবেশ করেন এবং বের হন। ফলে পুরুষ-মহিলাদের ঠেলাঠেলি, ধাক্কা-ধাক্কি শুরু হয়ে যায়, যা গুরুতর অপরাধ।
১০। মদীনা শরীফে পুরুষ-মহিলাদের নামাজ পড়ার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মাসজিদুন নববীতে পুরুষ-মহিলাদের গেট এবং নামাজের স্থান পৃথকভাবে নির্ধারিত করা আছে। কোনো অবস্থাতেই পুরুষ মহিলাদের গেট দিয়ে এবং মহিলা পুরুষদের গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি মহিলাদের গেটের কাছেও পুরুষরা যেতে পারেন না।
১১। মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে: মাসজিদে নববীতে একাধারে কেউ ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামা’আতের সাথে আদায় করলে তাঁর জন্য দোযখের আযাব থেকে মুক্তি এবং মুনাফেকী থেকে মুক্তির ছাড়পত্র লিখে দেয়া হবে বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (তিরমিযী হাঃ নং ২৪১) তাই সম্ভব হলে মাসজিদে নববীতে একাধারে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামা’আতের সাথে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল (সঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ এমনভাবে আদায় করবে যে, মধ্যে কোনো নামাজ ছুটবে না, সে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি এবং মুনাফিকী থেকে মুক্তি লাভ করবে। (মুসনাদে আহমদ ও মুজামুত্তবরানী, আহসানুল ফাতওয়া- খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৫, তিরমিযী হাঃ নং ২৪১)
১২। হজ্বের সফরে প্লেনের উড়ন্ত অবস্থায় প্লেনের অবস্থানের সাথে সময় নির্ণয় করে ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে হবে । সন্দেহ হলে প্লেনের কুরুদেরকে জিজ্ঞেস করে প্লেনের অবস্থান এবং সময় সম্বন্ধে জেনে নিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। প্লেনের সীটে বসেই নামাজ আদায় করা জায়েয। উযু না থাকলে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নামাজ কাযা করা যাবে না। তাই একটি মাটির চাকা/টুকরা সাথে রাখবেন যাতে প্রয়োজনে নিজ সীটে বসেই তায়াম্মুম করতে পারেন।
১৩। হজ্ব পালনকারীদের জন্য ঈদের নামাজ নেই। তাই মীনাতে ঈদের নামাজের কোনো জামাআ’ত অনুষ্ঠিত হয় না।
মক্কা মদীনায় জানাযার নামাজের নিয়ম-কানূন
১৪। জানাযার নামাজের নিয়ম-কানূনঃ জানাযার নামাজের সাথে হজ্বের আ’মলের মধ্যে যদিও কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও পবিত্র মক্কা মদীনায় অবস্থানকালে মাসজিদুল হারামে এবং মাসজিদুন নববীতে প্রায় প্রত্যেক ওয়াক্তে ফরয নামাজের পরেই জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সকলেই এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই সকলের অবগতির জন্য জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম লিখে দিলাম। হানাফী মায্হাব অনুসারেঃ
ক। শরয়ী বিধানঃ জানাযার নামায হচ্ছে ফরযে কিফায়া।
খ। জানাযার নামাজের রুকনঃ এ নামাজেও দুটি ফরয।
যথাঃ (১) চার তাকবীর বলা (হানাফী মাযহাবে) (২) দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। এ নামাজে রুকু সিজদা নেই। এ নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ’ করার নামাজ।
গ। জানাযার নামাজের সুন্নাতঃ এ নামাজে ৫ টি সুন্নাত। যথাঃ (১) মৃত ব্যক্তির বক্ষ বরাবর ইমামের দাঁড়ানো। (২) প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়া। (৩) দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরূদে ইব্রাহীম পড়া।
(৪) তৃতীয় তাকবীরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ’ করা। (৫) চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। কোনো কোনো মাযহাবে প্রথম তাকবীরের পরে ছানার পরিবর্তে সূরা ফাতিহা পড়া হয়। এ ব্যাপারে বিরোধের/বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।
‘আল্লহুম্মাগর্ফিলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গ-ইবিনা, ওয়া ছগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উন্ছানা, আল্লহুম্মা মান্ আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফাআহ্ইহী আ’লাল ইসলাম, ওয়ামান তাওয়াফ্-ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু আলাল ঈমান।’ (তিরমিযী)
অর্থ : ‘হে আল্লহ্! আমাদের জীবিত, মৃত, আমাদের মধ্যে উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট-বড়, পুরুষ ও নারী, সকলকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লহ্! তুমি আমাদের মধ্যে যাদেরকে জীবিত রাখবে, তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো এবং যাদেরকে মৃত্যু দিবে, তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দাও।’
সম্পূর্ণ দুআ’টি জানা বা মুখস্থ না থাকলে যেটুকু পারেন, সেটুকুই পড়ুন। আরবী শব্দকে সঠিক উচ্চারণে বাংলাতে লেখা খুব কঠিন। যাঁরা আরবী পড়তে পারেন, তাঁরা আরবীতে দুআ’টি শিখে নেবেন। এ দুআ’ যে কোনো সময়ে/মুনাজাতে করা যায়।
ছ। চতুর্থ তাকবীরের পরে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
জ। প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য ৩ টি তাকবীরে হাত, কান পর্যন্ত উঠাতে হবে না।
বিঃ দ্রঃ জানাযার নামাজের পূর্বে বা পরে সম্মিলিতভাবে দুআ’ বা মুনাজাত করার কোনো বিধান নেই। তবে দাফন শেষে দুআ’ করা যেতে পারে।
১৫। মাসজিদুল হারামে এবং মাসজিদুন নববীতে নামাজ পড়ার
বিশেষ ফযীলতঃ
সহীহ্ হাদীসে বর্ণিত আছেঃ- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এবং হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, মাসজিদুল হারামে এক রাকাআ’ত নামাজ আদায় করলে অন্যান্য মাসজিদে আদায়কৃত নামাজের এক লক্ষ গুণ বেশী সাওয়াব পাওয়া যায় এবং মাসজিদুন নববীতে এক রাকাআ’ত নামাজ পড়লে অন্যান্য মাসজিদে আদায়কৃত নামাজের এক হাজার গুণ বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়।