কখন কার উপর হজ্ব ফরজ হয়? হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত এবং হজ্ব ও উমরাহ্ সহীহ্ হওয়ার শর্তসমূহ
কখন কার উপর হজ্ব ফরজ হয়ঃ
সাধারণভাবে আমরা মনে করি যে, ধনী লোকদের অর্থাৎ যাদের লক্ষ-কোটি টাকা আছে তাদের উপরই হজ্ব ফরজ। এ ধারণাটি আদৌ সঠিক নয়। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী যে ব্যক্তির (মহিলা-পুরুষ) নিকট তার পরিবারের ২০/৩০/৪০ দিনের জন্য (অর্থাৎ হজ্ব সফরের জন্য যে ক’দিন প্রয়োজন) স্বাভাবিক খরচ বাদ দিয়ে যদি হজ্বে যাওয়া-আসা এবং খাওয়া খরচের পরিমাণ টাকা থাকে, তার উপরই হজ্ব ফরজ।
অন্যদিকে যদি কোনো ব্যক্তির নিকট বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত তিন-চার লক্ষ নগদ টাকা না থাকে, কিন্তু তার নিকট অন্য প্রকার সহায়-সম্পত্তি, যেমন অতিরিক্ত বাড়ী-ঘর, জমা-জমি, ব্যবসায়িক সম্পদ ইত্যাদি থাকে এবং সে সম্পদ বা সেগুলোর আংশিক বিক্রি করলেই হজ্বের টাকার ব্যবস্থা হতে পারে, তার উপরই হজ্ব ফরজ (আহসানুল ফাতাওয়া, ৪:৫৩২, শামী ২:৪৬২)। মহিলাদের ব্যাপারে একটি ব্যতিক্রম হলো এই যে, কোনো ধনাঢ্য পিতার মেয়ের বা ধনাঢ্য স্বামীর স্ত্রীর নিকট নিজস্ব নগদ টাকা/সম্পদ না থাকলেও যদি পিতা বা স্বামী মেয়েকে/স্ত্রীকে নিজ খরচে হজ্বে নিয়ে যান, তখন মেয়ে বা স্ত্রী যদি ফরজ হজ্ব আদায়ের নিয়ত করেন, তাহলে তাঁর (অর্থাৎ মেয়ের/স্ত্রীর) ফরজ হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সে যদি কোনো সূত্র থেকে অনেক টাকা বা সম্পদ প্রাপ্ত হন তাহলেও তাঁকে আর ফরজ হজ্ব করতে হবে না। কারণ একজন ব্যক্তির (নারী-পুরুষ) উপর জীবনে একবারই হজ্ব ফরজ হয়। পরবর্তীতে উক্ত মহিলা নিজের টাকা দিয়ে যতবারই হজ্ব করবেন সেটা নফল হজ্ব হিসেবে গণ্য হবে।
৪। হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত ৪টি। যথাঃ
(১) মুসলমান হওয়া।
(২) আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য থাকা।
(৩) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
(৪) আকল-বুদ্ধি থাকা অর্থাৎ পাগল নয়, এমন ব্যক্তি।
৫। হজ্ব ও উমরাহ্ সহীহ্ হওয়ার শর্তসমূহঃ
ক) ইখলাস ও সহীহ্ নিয়ত করা।
খ) হালাল ও পবিত্র উপার্জন দ্বারা হজ্ব/উমরাহ্ পালন করা।
গ) অহংকার, আত্মগরিমা, দাম্ভিকতা, হিংসা-বিদ্বেষ, গীবত, কূটনামী, অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করা।
ঘ) হজ্ব ও উমরাহর প্রতিটি আ’মল (কার্যক্রম) সরাসরি রসূল (সঃ) এবং সাহাবাগণের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে করা।
ঙ) শিরক ও বিদ্আত থেকে মুক্ত থাকা।
চ) যাবতীয় মন্দকাজ এবং যেসব কারণে হজ্ব ও উমরাহ্ বিনষ্ট হয়, সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা।
ছ) হজ্বের সফরে ও হজ্বকালীন সময়ে কাউকে কষ্ট না দেয়া, কারো হক নষ্ট না করা।
জ) হজ্ব ও উমরাহ্ করার পূর্বে ও পরে মহান আল্লহর বিধান এবং রসূল (সঃ) এর সুন্নাত মেনে জীবন যাপন করা।